• বুধবার ২৬ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১২ ১৪৩১

  • || ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:

প্রধানমন্ত্রীকে বদলে যাওয়া জীবনের গল্প শোনালেন সুবিধাভাগীরা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪  

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সুবিধাভোগীরা প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন, একটি ঘর কীভাবে বদলে দিয়েছে তাদের জীবন। দৈনন্দিন জীবনমানে অভুতপূর্ব পরিবর্তন আসার বর্ণনাও দিলেন তারা।

মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঈদের উপহার হিসেবে ৭০টি উপজেলা এবং ২৬টি জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীদের মাঝে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে এই জেলা-উপজেলাগুলোকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন তিনি। ফলে এখন ভূমিহীন ও গৃহহীন জেলা ও উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ালো যথাক্রমে ৫৮ ও ৪৬৪টিতে।

এদিন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পূর্ব দরঘাপাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঘর পাওয়া হোসনে আরা বলেন, ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী। অনেক সময় না খেয়ে সময় পার করে দিয়েছি। মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করেছি। প্রতিবন্ধী বলে স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কেউ সাহায্য করেনি। মানুষের কাছে অনেক কটূ কথা ও লাঞ্চনার স্বীকার হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছি। আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। মনে হয়েছিল যেন মরে যাই, কিন্তু মেয়েদের দিকে তাকিয়ে মরতে পারিনি। আপনার কাছ থেকে একটি ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি, পানি পেয়েছি। এর মাধ্যমে মেয়েদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস ও শক্তি পেয়েছি। আমরা আপনার কাছে ঋণী।

রবিউল আলম নামে আশ্রয়ণের আরেকজন সুবিধাভোগী মৎস্যজীবী বলেন, ‘সাগরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাই। কখনও মাছ পাই, কখনও পাই না। আমার ছেলেমেয়েদের না খেয়ে থাকতে হতো। যখন ঝড়বৃষ্টি হয় আমার ছেলেমেয়ের অনেক কষ্ট হতো, কান্না করতাম। আমার কোনও ঘর ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার বাড়ি হবে, ঘর হবে। এখন আমার বাড়ি হয়েছে আপনার জন্য। জায়গা পেয়েছি, ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি। এখন আমার ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এখন আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। আমার জেলে কার্ড আছে, সেই কার্ডের মাধ্যমে চাল পাই, খাবার পাই। আমার  দুইটা মেয়ে, চার ছেলে।’

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবু মিয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি ঘর দিয়েছেন আমরা অনেক সুখে আছি। আমার যখন ঘর ছিল না, তখন অনেক কষ্টে থেকেছি। হোটেলে কাজ-কাম করতাম। বাড়িতে থাকার জায়গা ছিল না। মানুষের বাড়িতে থেকেছি। আমার মা বৃদ্ধ ছিল। আমরা মা ও ছেলে মিলে হোটেলে কাজ করতাম। কিন্তু থাকার জায়গা ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘‘সারাদিন কাজ করে, সারা রাত জেগে আবারও সকালে হোটেলে চলে যেতাম। ছেলেমেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে থাকতাম। ঝর-বৃষ্টিতে মাথা গোজার জায়গা ছিল না। আমার মেয়ে বলতো— ‘বাবা, আমাদের কি কখনও বাড়ি হবে না?’ আমি বলতাম, ধৈর্য ধরো মা, আমাদেরও হবে একদিন। কিন্তু আমি অসুস্থ মানুষ, কীভাবে হবে কিছুই বুঝতাম না। প্রধানমন্ত্রী আপনার চেষ্টায় আজকে ঘর পেয়েছি। আজকে আমি খুব ভালো আছি।’’

ভোলার চরফ্যাশনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী বিধবা নারী বিবি আয়েশা বলেন, ‘আমার বাড়ি-ঘর নদী ভাইঙা ফেলেছে। ২৪ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে লিভার ক্যানসারে। আমার একটা ভাঙা ঘর ছিল, আমার কোনও সামর্থ্য ছিল না একটা টিন ঘরে লাগানোর। আপনি ঘর দিয়েছেন, বিদ্যুৎ দিছেন, স্কুল দিছেন, ঘাটলা দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমি কখনও ভাবি নাই, আমি একটা ঘর পাবো। আমি নামাজ পড়ে দোয়া করি, যেন আপনি ভালো থাকেন।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের সেবক হিসেবেই বাবার মতো সেবা করে যাবো। এই দেশের মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জীবন পাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ‌্য। আশ্রয়ণের মা‌ধ্যমে মানুষের যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন‌্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা দুখী মানুষের মুখে হাসি ফাঁটাতে চেয়েছিলেন। সেটিই আমাদের কর্তব‌্য বলে মনে করি। এজন‌্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।’ বঙ্গবন্ধুর মতো আজীবন দেশের মানুষে কল‌্যাণে ও তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার লালমনিরহাটে ১ হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি এবং ভোলা জেলায় ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন তিনি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন (একটি পরিবারে পাঁচ জন ব্যক্তি হিসাবে)।

প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সারা দেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে দুই দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা-পাকা বাড়ি দেওয়া হচ্ছে, যার মালিকানা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং বুধবার (১২ জুন) আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।