• বুধবার ০৩ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

  • || ২৫ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:

দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৪  

সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, ধরা হবে।


গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সে লক্ষ্যেই আমরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করেছি ও উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। এখানে কমানোর কিছু নেই। আমাদের জনগণ অত্যন্ত কর্মঠ, অত্যন্ত সৃজনশীল।

মাঝখানে কিছু কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক থাকে, ওগুলোকে আমরা ধর্তব্যে নিই না।’ জনগণের সহযোগিতায় বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান নিয়ে বিরোধী দলসহ অন্যদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সব দেশে দাম বেড়ে গেছে। এখন এক কাঠা জমি যার আছে, সে-ই কয়েক কোটি টাকার মালিক।

ঢাকা শহরে একটা কাঠা জমি থাকলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারে না। সেটায় তারা আয়কর দিতে পারে না। আয়কর দিয়ে যাতে তারা মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে, আর এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না করে, সে জন্যই মাঝেমধ্যে এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়।
অতীতে খালেদা জিয়াও এ সুযোগ নিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ধরনের সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেন নিয়েছিলেন এবং আরো অনেকে নিয়েছিলেন। তাঁরাও একইভাবে সেই ২০০৭/২০০৮ বা তার পরবর্তী সময়ে কালো টাকা বৈধ করে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির সাইফুর রহমানও করেছেন। এরশাদ সাহেবও বোধ হয় করেছিলেন। মনে হয় একটু খোঁজ নিতে হবে। আমি জানি না আমাদের বিরোধী দলের নেতাও করেছিলেন কি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মোটেও বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। একটা লক্ষ্য আমরা স্থির করি। শতভাগ কখনো পূরণ হয় না। এর পরও আমাদের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে যে এখানে আমরা যাব। সেটা আমরা যেতে পেরেছি। কোথায় ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট, আর কোথায় সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট! আমরা তো এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেটের মধ্যে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি, ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল, সেটি বাস্তবায়নে সক্ষম হব। সে ধারাবাহিকতা আমাদের আছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের কিন্তু নিজেদের ঘোষণাপত্র আছে, আমরা কিন্তু নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা করি। এই ইশতেহার আমরা কখনো ভুলে যাই না। জাতির কাছে যে ওয়াদা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, তা পালন করি। এই বাজেট প্রণয়নকালীন আমাদের যে নির্বাচনী ইশতেহার, সেটির অগ্রাধিকার এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে দিকনির্দেশনা, সেটাও বাজেটে উঠে এসেছে।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ। বাজেটের ওপর এ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতাসহ ২৩৪ সংসদ সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা বাজেটের ওপর আলোকপাত করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন।’

বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যে যা-ই করুন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। কিছুক্ষণ আগে বিরোধীদলীয় নেতা বললেন এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমাতে হবে...ইত্যাদি। তিনি বলেন, এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো আমরা চলতে চাই, চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ হাত পেতে ভিক্ষা চাওয়ার বাংলাদেশ নয়। আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করি এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করি। যাঁরা পরিবর্তনগুলো দেখেন না, তাঁদের বলব গ্রামে যান। গ্রামের মানুষের যে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, এরশাদ সাহেবের উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা নেই, সেটাও দেখবেন। কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। সেখানে ছুটে গেছি, মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এখন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছি।’

মেট্রো রেল নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চলছে। এই মেট্রো রেলে দুই লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। কিছু অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, মানে আঁতেল আর কি, বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করেন যাঁহারা, তাঁহারা বলেছিলেন, মেট্রো রেলের কী প্রয়োজন ছিল? ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে মেট্রো রেল না করলেই চলত। এটা তো অপচয়। তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাস কিনলেই তো যানজটমুক্ত হবে। এই হলো বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি! এখন মেট্রো রেল মানুষের জীবন, বিশেষ করে নারীদের জন্য সব থেকে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা এখন কী বলবেন, সেটা আমার একটু জানতে ইচ্ছা করে। তাঁদের সঙ্গে দেখা হলে একটু জিজ্ঞাসা করতে পারতাম।’ তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৪ ও লাইন-৫-এর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হলে ঢাকা শহরে আর যানজট বলে কিছু থাকবে না।

যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের হাব হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে সরকারপ্রধান আশা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি, সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিশেষ আইন যদি না করতাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ না করলে আজকে বিদ্যুত্টা আসত কোত্থেকে? আমরা ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ যাতে পরিবেশবান্ধব হয়, আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। নেপাল ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বানানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে, তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে এখন এয়ার কন্ডিশন, গাড়ি, লিফট ইত্যাদি আরাম-আয়েশটা, এটা যে আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং বিত্তশালীদের দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা করব।’

জ্বালানি তেল মজুদ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, এই ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এ খাতে আমরা কেন ভর্তুকি দেব?’

সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপ্তি আরো সুগভীর করতে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, একটি পর্যায়ে যেন কারো মুখাপেক্ষী না থাকতে হয়, তার জন্য এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম নেওয়া হয়েছে। এটার মাধ্যমে জীবনব্যাপী একটি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শ্রেণি-পেশা-নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

হাই-টেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠাননের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য বিদ্যমান কর অব্যাহতি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ৩০ জুন ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নিবন্ধিত সম্পূর্ণ নতুন কম্পানি ব্যাবসায়িক কার্যক্রম শুরু করলে তাদের ১০ বছরের জন্য নির্ধারিত হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যে ওয়াদা দিয়ে থাকি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি, তা আমরা পালন করি। বাজেট প্রণয়নের সময় এবার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার এবং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের যে দিকনির্দেশনা, তা উঠে এসেছে।’